রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪৫ অপরাহ্ন
ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিচ্ছে দুটি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। ১ জুলাই থেকে এপিবিএন এর ১৪ ও ১৬ ইউনিট এই দায়িত্ব গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে অপরাধিদের আটকের পর মামলাসহ আইনী প্রক্রিয়া আগের মতো জেলা পুলিশের অধীনে থাকবে।
সোমবার (২৯ জুন) রাতে কক্সবাজারের ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) আতিকুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আসা শুরু হয় ১৯৭৮ সালে। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গারা আসা যাওয়ার মধ্যে থাকলেও ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসা শুরু করে। এ পর্যন্ত পালিয়ে আসা নতুন পুরাতন ১১ লাখ রোহিঙ্গার বসতি উখিয়া-টেকনাফ। ৩৪টি ক্যাম্পে বিভক্ত করে এদের রাখা হয়েছে।
এসব রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ও আশেপাশের এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশ, সেনা বাহিনী, বিজিবি, র্যাব সদস্যরা নিয়োজিত আছেন। এতদিন কক্সবাজার জেলা পুলিশের অধীনে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে নিরাপত্তার কাজ পরিচালনা হয়েছে। কিন্তু এখন কক্সবাজার জেলা পুলিশের থেকে আলাদাভাবে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সদস্যরা এ দায়িত্ব পালন করবে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার জন্য ২০১৮ সালে এপিবিএন ১৪ নামে নতুন ইউনিট ও গত বছর ডিসেম্বর ১৬ ইউনিট চালু করা হয়। তবে সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দুই ইউনিটে আলাদা করে সদস্যদের পদায়ন করা হয়েছে। দুজন পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা ইউনিট দুটির অধিনায়কের দায়িত্বে আছেন।
কক্সবাজারস্থ ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) আতিকুর রহমান বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে যত ধরনের আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কাজ রয়েছে তা সব করবে এপিবিএন। যেমন ক্যাম্পের ভেতরে মারামারি, গৃহ বিবাদ, বিভিন্ন গ্রুপের দ্বন্দ্ব কারণে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়। এখন এসব কিছু দেখাশুনা করবে এপিবিএন। আর মামলা সংক্রান্ত অন্যান্য কাজগুলো করবে জেলা পুলিশ।’
কক্সবাজারের ১৪ ও ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের দেওয়া তথ্য মতে, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩৪টি আশ্রয় শিবির রয়েছে। যেখানে টেকনাফে ও উখিয়া ১৫টি ক্যাম্পের দায়িত্ব পালন করবে ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। আর উখিয়া ১৯টি ক্যাম্পের দায়িত্ব পালন করবে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। দুটি ব্যাটালিয়নে মোট ১১৭৬ জন জনবল রয়েছে। গড়ে প্রতি ক্যাম্পে ২৫ থেকে ৩০ জন আর্মড পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। আর তাদের থাকবেন একজন পরিদর্শক। এপিবিএনের দুটি ইউনিটে দুজন পুলিশ সুপারের পাশাপাশি দুজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, তিনজন করে সহকারী পুলিশ সুপার পদায়ন করা হয়েছে।
কক্সবাজারের ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) মোহাম্মদ হেমায়েতুল ইসলাম বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে এতদিন জেলা পুলিশের অধীনে এপিবিএন সদস্যরা দায়িত্ব পালন করতেন। জেলা পুলিশের সদস্যদের পর্যায়ক্রমে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ৩০ জুনের মধ্যে তারা নিজেদের ইউনিটে চলে যাবে। আগামী ১ জুলাই থেকে কাম্পের অভ্যন্তরে এপিবিএন সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ক্যাম্প এলাকায় আগে যে পুলিশ ফাঁড়িগুলো ছিলো সেগুলোতে এখন এপিবিএন সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি নতুন করে আরও কিছু স্থায়ী ফাঁড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে।’
জেলা পুলিশ জানায়, প্রাথমিক পর্যায়ে এপিবিএন দায়িত্ব দেওয়ার পর জেলা পুলিশ ও বিভিন্ন জেলা থেকে আনা পুলিশ সদস্যদের ৭০ শতাংশ সরিয়ে নেওয়া হবে। ৩০ শতাংশ পুলিশ সদস্য থাকবে। পরবর্তী এপিবিএন এর সদস্য বাড়ালে পুলিশের সকল সদস্য ক্যাম্প সরানো হবে। তবে জেলা পুলিশ ইচ্ছে করলে ক্যাম্পে অভিযান চালাতে পারবে এবং আইন প্রক্রিয়া থানার অধীনে থাকবে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দেখাশোনার জন্য ১৪ ও ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ শুরু করেছে। রোহিঙ্গাদের দৈনন্দিন যেসব কার্যক্রম আছে।
যেমন আইন-শৃঙ্খলাজনিত দায়িত্ব, যৌথ টহল, গাড়ি দিয়ে টহল, চেকপোস্টসহ সবকিছু এখন থেকে এপিবিএন দেখবে। জেলা পুলিশ এক্ষেত্রে এপিবিএনকে সহায়তা করবে। ক্যাম্পের অভ্যন্তরে যেকোনো অভিযান এপিবিএন পরিচালনা করবে। জেলা পুলিশ শুধুমাত্র মামলা দায়ের এবং মামলার তদন্ত কাজ পরিচালনা করবে। অথবা জেলা পুলিশের কাছে কোন ধরণের তথ্য থাকলে তখন এপিবিএনকে সাথে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করবে। মূলত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সার্বিক বিষয়গুলো এই দুটি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন দেখাশুনা করবে।
আর অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু দ্দৌজা বলেন, ‘আগামী ১ জুলাই থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে দায়িত্ব গ্রহণ করছে ১৪ ও ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন উখিয়া ক্যাম্পের বড় একটি অংশের নিরাপত্তা, টহলসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করবে। আর ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন টেকনাফের সমস্ত ক্যাম্প ও উখিয়ার একটি অংশের নিরাপত্তা, টহল ও অন্যান্য কার্যাদি পরিচালনা করবেন। সার্বিক মামলাসহ অন্যান্য কার্যক্রম থানাসমূহের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৫২টি হত্যাসহ নানা অপরাধে ৬৬৮টি মামলা হয়েছে। যেখানে আসামির সংখ্যা ১৫৬১ জন।
ভয়েস/ আআ